বর্ষামঙ্গল




... বাঁধন-হারা বৃষ্টি ধারা ঝরছে রয়ে রয়ে

অবশেষে আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে সত্যিই বর্ষা নামল । আমাদের এই ছোট্ট শহরে এ এক বিশাল পাওনা । বিধাতার অভিশাপে মেঘেদের এখানে বিশ্রাম নেওয়াও বারণ । অতি কৌতুহলী উচ্ছ্বল দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি ইতি-উতি উঁকি দিলেও হাওয়ার কড়া পাহারা মুহূর্তে তাদের তাড়িয়ে নিয়ে যায় । পাশের গ্রাম থেকে আসা সহকর্মী নিদাঘ-তপ্ত দুপুরে যখন বৃষ্টি ভেজা রাস্তার দুরবস্থার কথা শোনান অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস পড়ে । ঝড়ের দিনে আম কুড়ানো , কোঁচড় ভর্তি করে শিল তোলা , এমনকি মেঘ গর্জনে ভীত-ত্রস্ত ( কে জানে হয়তো বা আহ্লাদিত ) কই মাছেরা ডাঙায় উঠে এলে অতি উৎসাহীদের মাছ ধরার ভীড় ( দুঃসাহসী এই কাজে নিজে কখনো যোগদান করার সাহস পাইনি ) -- সেইসব পুরোনো স্মৃতির ঝিলিক মনকে আচ্ছন্ন করে । সেই স্মৃতির শহর অবশ্যই অন্য এক ঠাঁই -- যার থেকে দূরে কর্মসূত্রে আপাতত অন্যত্র অবস্থান করতে হচ্ছে । সেই মাতৃশহর ঘিরে আছে খুব সুন্দর এক নদী -- কুশিয়ারা । ওপারে বাংলাদেশ । ছেলেবেলায় আমার কাছে নদীর ওপার মাত্রই বাংলাদেশ -- সে বরাকই হোক , কিংবা ব্রহ্মপুত্র । দেশের সীমা বোঝার বয়স না হওয়া অব্দি নদীতে নৌকো চড়তে পারতাম না বলে মনে একটা দুঃখ ছিল । আশ-পাশের আর দশটা গ্রাম-শহরেও একটা করে নদী । গাড়ীতে কোথাও ঘুরতে যাই তো পাশেপাশে পথ দেখিয়ে নদীও চলে । নদী এবং জনপদের এই পাশাপাশি অবস্থান শুধু স্বাভাবিক নয় , সত্য বলেই জানতাম । আর একটা মজার (অনেকের কাছেই দুঃখের ) ব্যাপার হলো আমাদের ওই অঞ্চলে গ্রীষ্ম বলে কোনো ঋতু ছিল না , এখনো নেই । এই ঋতুর পুরোটাই গ্রাস করেছে বর্ষা ।

এখানে আবার উল্টো । গ্রীষ্মদেবতার দেবোত্তর সম্পত্তিতে বর্ষার প্রবেশ নিষেধ । নদীও বুঝি ভয়ে এই পথ মাড়াতে ভুলে গেছে । স্বাভাবিক ভাবেই পয়লা আষাঢ়ে বর্ষার এই মঙ্গলধ্বনি হৃদয়ে পুলক জাগায় । বৃষ্টির ধূপ-গন্ধে সিক্ত হয় মন । নববর্ষার ধারাজলে মাটির গভীরে নামে শিকড় । রূপকথার আমেজে ভাসে মায়াবী শরীর । ফ্যাকাশে জীবনযাত্রা খুঁজে পায় অন্যতর জীবনের স্বাদ । ঘরে-ঘরে খিচুড়ির গন্ধ ছড়ায় । নর-নারী পরস্পরের মুখোমুখি বসে । নিভৃত জীবন জুড়ে জেগে থাকে বর্ষার গান -- বর্ষামঙ্গল ।

No comments:

যাঁকে ঘিরে আমার অস্তিত্ব ...

যাঁকে ঘিরে আমার অস্তিত্ব ...